প্রবন্ধ
ধর্ম,বিজ্ঞান ও কুসংস্কারের নীরিখে অতিমারী কোভিড-19
-সুমন ঘোষ
ধর্ম যখন বিজ্ঞান কে বলে রাস্তা ছাড়ো!
বিজ্ঞান কি রাস্তা ছেড়ে দেয়?' কবি বিরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই কবিতার লাইনটা
বর্তমান সময়ের নীরিখে খুবই প্রাসঙ্গিক আজ। সত্যিই 'রাস্তা কারও একার নয়।' এক অপ্রতিরোধ্য ভাইরাস,যা প্রথমে মহামারী তারপর অতিমারীর রুপ ধারণ করে সারা
দুনিয়াকে ছেয়ে ফেলে,ভয়াবহতার সৃষ্টি করেছে বলা যায়। তাই ধর্ম ও বিজ্ঞান এই
ভাইরাস কে নিয়ন্ত্রন করবার এবং চিরতরে মুছে ফেলবার চেষ্টায় রত, বলা যায় দৃঢ়
প্রতিজ্ঞ। এ প্রবন্ধ লেখা পর্যন্ত এই অতিমারী দাবানলের মতো প্রায় 210 টি দেশে
ছড়িয়ে গিয়েছে। গোটা বিশ্বে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় 1 কোটি 33 লক্ষ 44 হাজার
159 জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় 5 লক্ষ 77 হাজার 944 জন মানুষ।বলা যায়
একটা অতিক্ষুৃদ্র ভাইরাসের কারণে মৃত্যু আজ হোলি খেলায় রুপান্তরিত। এর শেষ
কোথায়,উত্তরটা সকলেরই অজানা। সংক্রমন ও মৃত্যুর সংখ্যাটা শেষমেষ কোথায় পৌঁছতে
পারে কোনো বিশেষজ্ঞ,বৈজ্ঞানিক কিংবা কম্পিউটার মডেল আজ বলতে ব্যার্থ। এই প্রবন্ধে
সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক গবেষণার আলোকে,বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের
দেওয়া তথ্যাদির ভিত্তিতে 'ধর্ম', 'বিজ্ঞান' ও 'কুসংস্কার' এর নীরিখে অতিমারী
কোভিড-19 এর বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। 'ধর্ম' বলতে বোঝায় যা আমাদের ধারণ
করে।আর এই বিশ্ব প্রকৃতিতে প্রত্যেকটি বিষয়েরই একটি নির্দিষ্ট ধর্ম বা গুণাবলী
রয়েছে। আগুনের ধর্ম উত্তাপ, জলের ধর্ম তরল্য,শৈত্য ও সমুচ্চশীলতা বজায় রাখা। আর
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ আমাদের ধর্ম হল মানবতা। সে যাইহোক সৃষ্টির শুরু থেকেই
বিশ্বপরিবেশে 'ধর্মের' বিষয়ে মতবাদ ভিন্ন এবং তাই তার শ্রেনীবিভাগও রয়েছে হাজার।
তা নানা মত, নানা পরিধানের দেশে সবাই যে যার ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাশীল এবং সংস্কার
রীতি বজায় রাখতে যত্নশীল ও যথেষ্ট বদ্ধপরিকর। এবার আসি বিজ্ঞানের বিষয়ে,
'বিজ্ঞান' সারাজীবনই তথ্য,প্রমান,গবেষণা এর ভিত্তিতেই বিশ্বাসী ও আস্থাশীল। এ
পর্যন্ত সবই স্বাভাবিক, কিন্তু 'কুসংস্কার', যা সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে
মধ্যযুগ পেরিয়ে এই একবিংশ শতাব্দী, এই অতিমারীর মতোই অপ্রতিরোধ্য ও অপরিবর্তনশীল।বিশ্ব
পরিবেশের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমাদের রীতিমত অবাক ও শঙ্কিত হতে হয়। এক দিকে
অতিক্ষুদ্র ভাইরাস আর তারই সাথে ঘটে যাওয়া একের পর এক বিপর্যয়ে শঙ্কিত আজ পৃথিবী
মাতৃকা,শঙ্কিত আমরা।বিপর্যস্ত আজ স্বাভাবিক জনজীবন।চেনা পৃথিবীর রুপ,রং,বর্ন সবই
পরিবর্তিত।'গৃহবন্দি' থাকতে থাকতে আমরা রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছি; একটু মুক্তি
চাই।আবারও ওই খোলা আকাশটার নীচে দাঁড়িয়ে প্রাণভরা নিঃশ্বাস নিতে উদগ্রীব মন
আমাদের। কিন্তু কোথায় সে মুক্তির পথ? 'ধর্ম' না 'বিজ্ঞান' কে দেবে মুক্তি।উত্তরটা
অজানা।আমরা যারা স্রষ্টায় বিশ্বাসী,সেই পরমপিতার কাছেই প্রার্থনারত।আর বিজ্ঞান
তার মত করে চেষ্টায় রত।'হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন', ' রেমডেসেভির' কখনও 'প্লাজমা
থেরাপি' কিংবা 'ব্রায়োনিয়া অ্যালবা', 'আরসেনিকাম অ্যালবাম' আবার কখনও সেই
ভারতীয় আয়ুশমন্ত্রকের পরামর্শ সবই আজ বৃথা।বিশ্ব সাস্থ্যসংস্থা স্বীকার করে নিয়েছে
ভ্যাকসিন্ ছাড়া বিকল্প আর কিছু নেই।তাই এই অতিমারী কে ঠেকাতে সব দেশের বিজ্ঞানীরা
নিজেদের করেছে ব্যস্ত।অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরী প্রতিষেধক(ChAdox1 ncov-19)
চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল কিংবা মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা 'ফাইজার' ও জার্মান
সংস্থা 'বায়োনটেক এসই', ভারতের হাইদ্রাবাদের ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা 'ভারত
বায়োটেক' এর তৈরী 'COVAXIN' এবং গুজরাটের আহমেদবাদের ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা
'জাইডাস ক্যাডিলার' 'Zycov-D' এর হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছে। আর তারই মাঝে সব
সম্ভবনা কে দূরে ঠেলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন্ কে বাজারজাত করতে উদ্যোগী
হয়েছে রাশিয়া।এদিকে এই কোভিড কে বাতাসে ভাস্যমান ভাইরাস হিসাবে স্বীকারুক্তি এবং
আবারও উদ্বেগজনক ঘোষণা করেছেন বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার প্রধান ট্রেডস্ আ্যাডহানোম
গ্যাব্রিয়েসাস। তাঁর মতে 'ওল্ড নর্মাল' এ ফেরা কোনোমতেই সম্ভব নয়, এখন ' নিউ
নর্মাল-ই ' ভবিষ্যৎ। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা যখন আশাহীন তখন
আমরা অর্থ্যাৎ সাধারণ মানুষ এর অবস্থান টা ঠিক কি।মাস্ক পড়া, সামাজিক দূরত্ব
বজায় রাখা, সাস্থ্য বিধি মানা এসব তো দূর, আমরা এই মারণ ব্যাধির বিরুদ্ধে রীতিমত
পুতুল খেলায় রত। তা নাহলে কখনো কাঠ কয়লার টিকা,কখনো গোমুত্র পান,কিংবা হনুমান
চল্লিশা পাঠে করোনা মুক্তি,অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার্ এর বদলে অ্যালকোহল্ পান
করে কিংবা শরীরে ছড়িয়ে চির অন্ধকারের যুগে ফিরে যাবার চেষ্টা করে যাবার কোনো
যুক্তি ছিল না। এই ভাইরাসের ভয়াবহতা কমাতে পারে 'গাজা-ভাং',আমেরিকার নেব্রাস্কা
বিশ্ববিদ্যালয় ও ট্রেক্সাস বায়োমেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষকদের দেওয়া তথ্য
আধুনিক বিজ্ঞানের পরিসর কে কতটা বাড়াতে পেরেছে জানা নেই,তবে একশ্রেণীর মানুষকে
সাময়িক আনন্দ দিয়ে আরও নেশা করার প্রবণতা কে বাড়িয়ে দিয়েছে বলায় যায়। তবুও
অবশেষে বলি, সব ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে, অন্ধকার কে পিছনে ফেলে আশার আলোর সন্ধানে
আমাদের হতে হবে 'চরৈবেতি' মন্ত্রে দীক্ষিত।
লেখক পরিচিতি
সুমন ঘোষ( জন্ম 1404 বঙ্গাব্দের 7 ই বৈশাখ, ইংরেজি 15 এপ্রিল,1997) শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বাসস্থান হুগলী জেলার কামারপুকুরের বেতবনী গ্রামের একজন অজ্ঞাত কবি,লেখক,প্রাবন্ধিক ও গল্পকার। বাস্তবতার কাছে বারংবার পরাজিত হয়েও ফিরে আসা এবং চারুপাঠ প্রকাশনীর হাত ধরে প্রথম কবিতা সংকলন" অপ্রকাশিত" এর মাধ্যমে কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ। এছাড়াও দেশ ও বিদেশের নানান পত্র ও পত্রিকা এবং ফেসবুক পেজ থেকে বিভিন্ন কবিতা,গল্প,অণুগল্প,প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
*লেখা পাঠান এই ঠিকানায়
WhatsApp - +919749257572
No comments:
Post a Comment